আমাদের দেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমাদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও আমাদের পর্যটন শিল্প বিশ্বমানের হয়ে উঠেনি। তারপরও পর্যটকদের পদচারণায় ভিড় লেগে থাকে দেশের পর্যটন স্পটগুলো। দেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে অনন্য ও একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। অপূর্ব সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশ যার প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর একমাত্র দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, যা আর পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ১২০ কিমি. দীর্ঘ সৈকতটিতে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাই তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এছাড়াও দেশের ৬৪ জেলাই রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে মন্ডিত ছোট বড় অসংখ্য পর্যটন স্পট। ছুটির দিনগুলোতে স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকরা ভিড় জমান ঐসব দর্শনীয় জায়গাগুলোতে।
পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনাময় আমাদের এই বাংলাদেশে নেই নির্দিষ্ট কোনো আয় বা কর্মসংস্থানের সীমা। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হাজার বছরের প্রাচীন পুরাকৃর্তি, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, জাতিগত বৈচিত্র্যতা, সমৃদ্ধ হস্ত ও কুটির শিল্প ভরা আমাদের দেশে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সবুজ পাহাড় ঘেরা পার্বত্য অঞ্চল, বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা। বাংলাদেশ তার উষ্ণ আতিথেয়তা, শিল্পকলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। সর্বোপরি, বাংলাদেশ বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি।
এসব পর্যটন সম্ভাবনাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রচার ব্যবস্থা। পর্যটনের প্রচারে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তার কারন হিসেবে রয়েছে দেশি বিদেশি পর্যটকদের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থ। জান মালের নিরাপত্তার অভাবে পর্যটকরা আমাদের দেশের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য, একটি শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যেমন সুষম খাদ্য প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন নির্মল আনন্দেরও। আর সেই নির্মল আনন্দের অন্যতম প্রধান খোরাক হলো বিনোদন।
মানবসত্তার সুকুমার বৃত্তিগুলোর বিকাশের জন্য অন্যতম প্রধান নিয়ামকই হলো সুস্থ বিনোদন। মাঠে-ময়দানে ঘুরতে যাওয়া, বয়সোপযোগী খেলাধুলা, লাইব্রেরিতে যাওয়া, নাটক, সিনেমা, থিয়েটার দেখা বা প্রিয় শিল্পীর গান শোনা, পেইন্টিং দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, এ সবই বিনোদনের একটা অংশ।
এদিকে সেই সাথে রয়েছে ভিনদেশী পর্যটকদের জন্য তাদের সংস্কৃতিসম্মত নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থ। তাদের জন্য এসব কোন ব্যবস্থাই রাখেন নি আমাদের দেশের হোটেল রেস্তোরাঁ মালিকরা। ভিনদেশীরা আমাদের দেশে ঘিরতে এসে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাঙ্গালী খাবার খেতে হচ্ছে। নতুবা অনাহারে থেকে কষ্ট পোহাতে হয়। আমাদের পর্যটন শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে রয়েছি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত সব পক্ষকে নিয়ে এক সাথে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
এ শিল্পের উন্নয়নের সাথে সাথে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারবে যা জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে।