ঢাকা ০৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় কবি’র জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী

আবদুল গনি : প্রতিবছর আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি ভাবে ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী এবং ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যুবার্ষিকী । কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহীকবি নামেও পরিচিত। আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ছিল নানা বৈচিত্র্যময়।
কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫ মে, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জৈষ্ঠ্য এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। জাহেদা খাতুন ছিলেন কাজী ফকির আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী।
পিতা-মাতার ৬ষ্ঠ সন্তান ছিলেন নজরুল। নজরুলের সহোদর তিন ভাই ও এক বোন। এরা হলেন-কাজী সাহেব জান,কাজী আলী হোসেন ও বোন উম্মেকুলছুম।
নজরুলের জন্মের আগে তাঁর পর পর চার ভাইয়ের মৃত্য্রর পর নজরুলের জন্ম্। এ জন্যেই নজরুলের জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হলো দুখু মিয়া। তাঁর বাবা বাড়ির মসজিদের পাশে একটি মক্তব চালাতেন ও মসজিদে আযান দিতেন, ইমামতি করতেন ও মাজারের খাদেমের কাজ করেন। কোরআন খতমের দাওয়াত গ্রহণ করতেন।
কাজী ফকির আহমেদ কিছ’দিন জ্বরে অসুস্থ থাকা পর ১৯০৮ সালে কবির ৯ বছর বয়সে ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ৭ চৈত্র বাবাকাজ ফকির আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অপরিসীম ও বর্ণনা করেও বোধ হয় তা শেষ করা যাবে না । বাংলা সাহিত্যে তাঁর সব ক্ষেত্রে বিচরণ ছিল মুক্তবিহঙ্গে পাখি উড়ার মতই। তিনি আমাদের অহংকার ও তারুণ্যের কবি, প্রেরণার কবি,উৎসের কবি,উদ্দীপনার কবি।
তিনি বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও একজন বাঙালি কবি,একটি বিদ্রোহী কবিতা লিখেই বিদ্রোহীকবি এবং পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। দেশপ্রেম,মহত্ব,মানুষত্ববোধ,মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা জাগ্রত করা তাঁর লেখনিতে পাওয়া গেছে ।
পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ থেকে পরাধীনতার বিরুদ্ধে লেখনি,বৃটিশ শাসকদের হুমকি-দমকি উপেক্ষা করেও ক্ষুরদার লেখনি অব্যাহত রাখা,প্রেম-প্রণয়-ভালোবাসায় বিচ্ছেদ,জেল-জরিমানা,অর্থভৈববের প্রার্র্চূতাহীন জীবন, দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে থেকেই জীবন-যাপন,প্রথমজীবনে নার্গিসের প্রেমের বিরহ-বেদনা, প্রেয়সী ও পরে স্ত্রী প্রমীলার পক্ষাঘাত জনিত অসুস্থতায় কবিকে সাময়িক বিচলিত হওয়া,সন্তান ও মাতৃবিয়োগ থেমে যান নি তিনি।
তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালী কবি,ঔপন্যাসিক,নাট্যকার,সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
১৯২০ সাল হতে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তাঁর সব রচনা সামগ্রীর সঠিক হিসেব পাওয়া না গেলেও ২ হাজার ৮শ গান, ৯শ কবিত,১শ টি প্রবন্ধ,৫৫ টি গ্রন্থ,২৫টি নাটক, ১৮টি গল্প,১শ ৯৪ গজল ও ইসলামী গান ও ৪৫০ টি শ্যামা সঙ্গীত রচনা করেন।
বাংলা ভাষার সাহিত্যগগনে আর কোনো বাংলা ভাষার কবি বা সাহিত্যিক ২০-২১ বছরের এ অল্প সময়ে এতগুলো রচনাবলী কেউ রেখে গেছেন কি না তা আমার জানা নেই। বাংলা গানে তিনি রাগ-রাগিণী সংযোজন করেন।
তিনি বাংলা সাহিত্য,কবিতায় সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দু’ বাংলাতেই তাঁর কবিতা,গান ও গজলে সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে ‘ বিদ্রোহী কবি’নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা মননে, মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি একাধারে কবি,সাহিত্যিক,সংগীতজ্ঞ,সাংবাদিক, সম্পাদক,রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার।
অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ,ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী,তেমনই জীবনের সব কাজেই “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
তাঁর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে উদযাপিত হয়ে আসছে। চাঁদপুরেও জেলা প্রশাসনসহ কটি সংগঠন ও নজরুল গবেষণা পরিষদ, চাঁদপুর কবির জন্মবার্ষিকী পালন করে থাকে ।
আবদুল গনি
১৮ মে ২০২২
ট্যাগস :

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় হাজীগঞ্জে ইফতার মাহফিল

জাতীয় কবি’র জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী

আপডেট সময় : ০১:৩৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
আবদুল গনি : প্রতিবছর আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি ভাবে ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী এবং ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যুবার্ষিকী । কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহীকবি নামেও পরিচিত। আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ছিল নানা বৈচিত্র্যময়।
কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫ মে, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জৈষ্ঠ্য এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। জাহেদা খাতুন ছিলেন কাজী ফকির আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী।
পিতা-মাতার ৬ষ্ঠ সন্তান ছিলেন নজরুল। নজরুলের সহোদর তিন ভাই ও এক বোন। এরা হলেন-কাজী সাহেব জান,কাজী আলী হোসেন ও বোন উম্মেকুলছুম।
নজরুলের জন্মের আগে তাঁর পর পর চার ভাইয়ের মৃত্য্রর পর নজরুলের জন্ম্। এ জন্যেই নজরুলের জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হলো দুখু মিয়া। তাঁর বাবা বাড়ির মসজিদের পাশে একটি মক্তব চালাতেন ও মসজিদে আযান দিতেন, ইমামতি করতেন ও মাজারের খাদেমের কাজ করেন। কোরআন খতমের দাওয়াত গ্রহণ করতেন।
কাজী ফকির আহমেদ কিছ’দিন জ্বরে অসুস্থ থাকা পর ১৯০৮ সালে কবির ৯ বছর বয়সে ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ৭ চৈত্র বাবাকাজ ফকির আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অপরিসীম ও বর্ণনা করেও বোধ হয় তা শেষ করা যাবে না । বাংলা সাহিত্যে তাঁর সব ক্ষেত্রে বিচরণ ছিল মুক্তবিহঙ্গে পাখি উড়ার মতই। তিনি আমাদের অহংকার ও তারুণ্যের কবি, প্রেরণার কবি,উৎসের কবি,উদ্দীপনার কবি।
তিনি বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও একজন বাঙালি কবি,একটি বিদ্রোহী কবিতা লিখেই বিদ্রোহীকবি এবং পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। দেশপ্রেম,মহত্ব,মানুষত্ববোধ,মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা জাগ্রত করা তাঁর লেখনিতে পাওয়া গেছে ।
পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ থেকে পরাধীনতার বিরুদ্ধে লেখনি,বৃটিশ শাসকদের হুমকি-দমকি উপেক্ষা করেও ক্ষুরদার লেখনি অব্যাহত রাখা,প্রেম-প্রণয়-ভালোবাসায় বিচ্ছেদ,জেল-জরিমানা,অর্থভৈববের প্রার্র্চূতাহীন জীবন, দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে থেকেই জীবন-যাপন,প্রথমজীবনে নার্গিসের প্রেমের বিরহ-বেদনা, প্রেয়সী ও পরে স্ত্রী প্রমীলার পক্ষাঘাত জনিত অসুস্থতায় কবিকে সাময়িক বিচলিত হওয়া,সন্তান ও মাতৃবিয়োগ থেমে যান নি তিনি।
তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালী কবি,ঔপন্যাসিক,নাট্যকার,সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
১৯২০ সাল হতে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তাঁর সব রচনা সামগ্রীর সঠিক হিসেব পাওয়া না গেলেও ২ হাজার ৮শ গান, ৯শ কবিত,১শ টি প্রবন্ধ,৫৫ টি গ্রন্থ,২৫টি নাটক, ১৮টি গল্প,১শ ৯৪ গজল ও ইসলামী গান ও ৪৫০ টি শ্যামা সঙ্গীত রচনা করেন।
বাংলা ভাষার সাহিত্যগগনে আর কোনো বাংলা ভাষার কবি বা সাহিত্যিক ২০-২১ বছরের এ অল্প সময়ে এতগুলো রচনাবলী কেউ রেখে গেছেন কি না তা আমার জানা নেই। বাংলা গানে তিনি রাগ-রাগিণী সংযোজন করেন।
তিনি বাংলা সাহিত্য,কবিতায় সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দু’ বাংলাতেই তাঁর কবিতা,গান ও গজলে সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে ‘ বিদ্রোহী কবি’নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা মননে, মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি একাধারে কবি,সাহিত্যিক,সংগীতজ্ঞ,সাংবাদিক, সম্পাদক,রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার।
অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ,ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী,তেমনই জীবনের সব কাজেই “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
তাঁর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে উদযাপিত হয়ে আসছে। চাঁদপুরেও জেলা প্রশাসনসহ কটি সংগঠন ও নজরুল গবেষণা পরিষদ, চাঁদপুর কবির জন্মবার্ষিকী পালন করে থাকে ।
আবদুল গনি
১৮ মে ২০২২