ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় ওয়াজ করতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে আবু ত্ব-হা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ওয়াজ মাহফিল করতে এসে জনতার তোপের মুখে পড়েছেন ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান। এসময় তিনিসহ তার তিন ব্যক্তিগত সহকারীকে অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার এক সহকারীকে হেনস্তাও করা হয়।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চে বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান ও তার তিন ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শায়েক আবদুল আলিম, মাওলানা মোজাহিদ ও মাওলানা ফিরোজকে ঘিরে রেখেছেন শ্রোতা ও স্থানীয়রা। এরপর প্রায় আধাঘণ্টা সময় ত্ব-হার ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা। পরে মাওলানা মোজাহিদকে রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় মুসল্লি, মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের মোকন্দপুর জামে মসজিদের উদ্যাগে ইসলামি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে প্রধান বক্তা করা হয় আবু ত্ব-হা আদনানকে। গত ৮ নভেম্বর প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা নেন ত্ব-হার ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শায়েক আবদুল আলিম। বাকি টাকা ওয়াজ শেষে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ শনিবার সকালে শায়েক আবদুল আলিম মসজিদ কমিটিকে জানান, পুরো টাকা ছাড়া তারা ওয়াজে উপস্থিত থাকবেন না। পরে বাধ্য হয়ে আরও ২০ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠায় আয়োজক কমিটি।

Model Hospital

মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেন শাহিন জানান, গত ৮ নভেম্বর আবু ত্ব-হা আদনান ও তার সহকারী শায়েখ আবদুল আলিমের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয় আয়োজক কমিটি। সেখানে ওয়াজের বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। ওয়াজ করতে হবে পুরো দুই ঘণ্টা। সেদিন ২০ হাজার টাকা অগ্রিমও নেন ত্ব-হা। শনিবার সকালে দেওয়া হয় আরও ২০ হাজার। ওয়াজের মাঠে উপস্থিত হতেই বাকি ১০ হাজার দেওয়া হয়।

বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বক্তা আবু ত্ব-হার ওয়াজ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পৌনে ৫টায় বক্তব্য শুরু করে সোয়া ৫টায় শেষ করে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ও শ্রোতারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং আরও বক্তব্য দিতে বলেন ত্ব-হাকে। কিন্তু বগুড়ার সোনাতলায় আরেকটি মাহফিল থাকায় তিনি অপারগতা জানান।

এসময় হঠাৎ ত্বহার সফরসঙ্গী তার তিন ব্যক্তিগত সহকারী স্থানীয়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের রোসানলে পড়েন। তখন ত্ব-হার সহকারী মাওলানা মোজাহিদ এক মুসল্লিকে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকায় আর কতক্ষণ বক্তব্য দিতে হবে?’। তার এ কথা বলার পর লোকজন তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এসময় তাকে মারধরও করা হয়।

এ বিষয়ে মাহফিলের ক্যাশিয়ার সাখাওয়াত হোসেন শাহিন বলেন, এত টাকা দিলাম! অথচ ৩০ হাজার স্রোতাকে ত্ব-হা ফাঁকি দিলেন। আধাঘণ্টা বক্তব্য শোনার জন্য কি সকাল থেকে এত মানুষ বসেছিল? তবে মাওলানা মোজাহিদকে হেনস্তা ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

আয়োজক কমিটি ও মসজিদ কমিটির সদস্য বোরহান উদ্দিন লেলিন বলেন, ‘ত্ব-হার সঙ্গে চুক্তি ছিল দুই ঘণ্টায় ৫০ হাজার। কিন্তু তিনি ওয়াজ করলেন ৩০ মিনিট। একটা টাকাও তো কম নেননি। এটা নিয়ে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। হাজার হলেও তো সে (আবু ত্ব-হা) সম্মানী মানুষ।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোচাশহর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘ত্ব-হা তো কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তাই লোকজন ক্ষিপ্ত হয়েছিল। আমি লোক পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করি।’

তবে আবু ত্ব-হার সঙ্গী মাওলানা মোজাহিদকে হেনস্তার কথা শিকার করলেও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনিও।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইজার উদ্দিন বলেন, ‘ওই ঘটনার বিষয়ে আবু-ত্বহাসহ তিনজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টির তদন্ত চলছে।’

ট্যাগস :

আঁধারের আয়নাঘর আস্তাকুড়ে নিপাত যাক : মিজানুর রহমান আজহারী

গাইবান্ধায় ওয়াজ করতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে আবু ত্ব-হা

আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ওয়াজ মাহফিল করতে এসে জনতার তোপের মুখে পড়েছেন ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান। এসময় তিনিসহ তার তিন ব্যক্তিগত সহকারীকে অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার এক সহকারীকে হেনস্তাও করা হয়।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চে বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান ও তার তিন ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শায়েক আবদুল আলিম, মাওলানা মোজাহিদ ও মাওলানা ফিরোজকে ঘিরে রেখেছেন শ্রোতা ও স্থানীয়রা। এরপর প্রায় আধাঘণ্টা সময় ত্ব-হার ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা। পরে মাওলানা মোজাহিদকে রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় মুসল্লি, মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের মোকন্দপুর জামে মসজিদের উদ্যাগে ইসলামি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে প্রধান বক্তা করা হয় আবু ত্ব-হা আদনানকে। গত ৮ নভেম্বর প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা নেন ত্ব-হার ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শায়েক আবদুল আলিম। বাকি টাকা ওয়াজ শেষে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ শনিবার সকালে শায়েক আবদুল আলিম মসজিদ কমিটিকে জানান, পুরো টাকা ছাড়া তারা ওয়াজে উপস্থিত থাকবেন না। পরে বাধ্য হয়ে আরও ২০ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠায় আয়োজক কমিটি।

Model Hospital

মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেন শাহিন জানান, গত ৮ নভেম্বর আবু ত্ব-হা আদনান ও তার সহকারী শায়েখ আবদুল আলিমের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয় আয়োজক কমিটি। সেখানে ওয়াজের বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। ওয়াজ করতে হবে পুরো দুই ঘণ্টা। সেদিন ২০ হাজার টাকা অগ্রিমও নেন ত্ব-হা। শনিবার সকালে দেওয়া হয় আরও ২০ হাজার। ওয়াজের মাঠে উপস্থিত হতেই বাকি ১০ হাজার দেওয়া হয়।

বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বক্তা আবু ত্ব-হার ওয়াজ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পৌনে ৫টায় বক্তব্য শুরু করে সোয়া ৫টায় শেষ করে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ও শ্রোতারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং আরও বক্তব্য দিতে বলেন ত্ব-হাকে। কিন্তু বগুড়ার সোনাতলায় আরেকটি মাহফিল থাকায় তিনি অপারগতা জানান।

এসময় হঠাৎ ত্বহার সফরসঙ্গী তার তিন ব্যক্তিগত সহকারী স্থানীয়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের রোসানলে পড়েন। তখন ত্ব-হার সহকারী মাওলানা মোজাহিদ এক মুসল্লিকে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকায় আর কতক্ষণ বক্তব্য দিতে হবে?’। তার এ কথা বলার পর লোকজন তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এসময় তাকে মারধরও করা হয়।

এ বিষয়ে মাহফিলের ক্যাশিয়ার সাখাওয়াত হোসেন শাহিন বলেন, এত টাকা দিলাম! অথচ ৩০ হাজার স্রোতাকে ত্ব-হা ফাঁকি দিলেন। আধাঘণ্টা বক্তব্য শোনার জন্য কি সকাল থেকে এত মানুষ বসেছিল? তবে মাওলানা মোজাহিদকে হেনস্তা ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

আয়োজক কমিটি ও মসজিদ কমিটির সদস্য বোরহান উদ্দিন লেলিন বলেন, ‘ত্ব-হার সঙ্গে চুক্তি ছিল দুই ঘণ্টায় ৫০ হাজার। কিন্তু তিনি ওয়াজ করলেন ৩০ মিনিট। একটা টাকাও তো কম নেননি। এটা নিয়ে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। হাজার হলেও তো সে (আবু ত্ব-হা) সম্মানী মানুষ।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোচাশহর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘ত্ব-হা তো কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তাই লোকজন ক্ষিপ্ত হয়েছিল। আমি লোক পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করি।’

তবে আবু ত্ব-হার সঙ্গী মাওলানা মোজাহিদকে হেনস্তার কথা শিকার করলেও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনিও।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইজার উদ্দিন বলেন, ‘ওই ঘটনার বিষয়ে আবু-ত্বহাসহ তিনজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টির তদন্ত চলছে।’