ঢাকা ১২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাহরাস্তিতে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি  উৎসব উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী মেলা

শাহরাস্তিতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ধর্মীয় রীতি বজায় রেখে সনাতন  ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব  উপলক্ষে মাসব্যাপী গ্রামীণ কার্তিক মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আবহমানকালের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দির সংলগ্ন কালিবাড়ি মাঠে মাসব্যাপী এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগের হিসাব ধরে বাংলা আনুমানিক ৬০৯ বঙ্গাব্দ, প্রায় ৮ শ’ বছর পূর্বে শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী  কালীবাড়ি মন্দিরটি স্থাপিত হয়।
শাহরাস্তি উপজেলা শহরের ততকালিন মেহার পরগনায় অবস্থিত মহাত্মা সর্ব্বানন্দ ঠাকুর এখানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং সে সময় থেকে এটি সিদ্ধ পীঠস্থান বলে অভিহিত হয়ে আসছে। ওই হিসেবে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উতসবের দিন শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী কালীবাড়ির গুরুত্ব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।
স্থানীয় পুরোহিত, সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ ও এলাকাবাসী  জানান,অবিভক্ত ভারত বর্ষের অধীন থাকাবস্থায় এই মেহের কালীবাড়ি পুজোর আড়ম্বর  ছিল নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ । পরবর্তীতে দেশ বিভাগের পর এটির জৌলুস হারাতে বসে। দেশ স্বাধীনের (১৯৭১) পর থেকে ক্রমান্বয়ে মেলাটি সীমিত আকারে  উদযাপন হয়ে আসছে।
এরপরও প্রতি বছর কার্তিক মাস এলেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শ্যামা পূজা ও দীপাবলি উতসব উপলক্ষে মেহেরকালী বাড়ি মন্দিরে এলাকায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাচারের  মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার মন:তুষ্টি লাভের আশায় রাত জেগে পূজা অর্চনায় মেতে উঠেন।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,দেশ বিদেশ থেকে আসা অসংখ্য পুণ্যার্থী তাদের মনের বাসনা পূরণের জন্যে প্রার্থনারত থেকে বিনিদ্র রজনী পার করেন।
একই সঙ্গে কালীগাছের চতুর্দিকে প্রদক্ষিন করে ভক্তবৃন্দ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করেন,সাথে ঢাকের  বাদ্য বাজিয়ে মন:স্কামনার্থে পাঠা বলি দেয়। এভাবে পূজা লগ্ন থেকে পরবর্তী প্রথম প্রহর পর্যন্ত রাত কাটে ভক্তদের।
এছাড়া খানিক দূরে মেহের কালিবাড়ি মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা। মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন  প্রান্ত থেকে দোকানিরা হরেক রকম মালামাল নিয়ে পশরা সাজিয়ে বসেছেন।
ওই মেলায় প্রথম দিকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের অতিথিদের উপস্থিত থাকলেও পরবর্তীতে এই মেলাটি আঞ্চলিক মেলায় রূপ নেয়। পরবর্তীতে বৃহত্তর কুমিল্লা চাঁদপুর  রামগঞ্জ নোয়াখালীর চাটখিল অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা সাধারণ  ভিড় জমায় এ মেলায়।ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকমের মন্ডা, আঙ্গুলভাজা, খেলনাকদমা,দোকানে মধ্যে কাপড়, চশমা, মিঠাই, আচারের দোকান, গৃহস্থালির জিনিসপত্রের দোকান দেখা যায়। এই মেলা হতেই প্রতি বছর কয়েক  কোটি টাকার উপর কাঠের আসবাবপত্র বিক্রি হয় বলেও ব্যবসায়ীরা জানান। এবারও দোকানিরা সেরকম প্রত্যাশা নিয়ে  এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন।উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন।
এদিকে শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী কালীবাড়ি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিখিল চন্দ্র মজুমদার জানান,নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়েও  ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর ধারক বাহক হিসাবে  এ মেহের কালীবাড়ি আজো দাঁড়িয়ে আছে তার আপন ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল মহিমায়।
পূরণ করেছে জাতি, ধর্ম, গোত্র, ধনী, গরীব, উঁচু, নিচু, ছোট-বড় সকল মানুষের মনস্কামনা। ধর্মীয় ভাবধারা রেখেছে সমুন্নত। সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন এই কালীবাড়ির মেলা,যা আজও বহমান এ গ্রামীণ জনপদে।
ট্যাগস :

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২৫ পরিবারকে আমেরিকা প্রবাসী মতলব সমিতির আর্থিক সহায়তা প্রদান 

শাহরাস্তিতে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি  উৎসব উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী মেলা

আপডেট সময় : ০৮:৪১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
শাহরাস্তিতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ধর্মীয় রীতি বজায় রেখে সনাতন  ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব  উপলক্ষে মাসব্যাপী গ্রামীণ কার্তিক মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আবহমানকালের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দির সংলগ্ন কালিবাড়ি মাঠে মাসব্যাপী এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগের হিসাব ধরে বাংলা আনুমানিক ৬০৯ বঙ্গাব্দ, প্রায় ৮ শ’ বছর পূর্বে শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী  কালীবাড়ি মন্দিরটি স্থাপিত হয়।
শাহরাস্তি উপজেলা শহরের ততকালিন মেহার পরগনায় অবস্থিত মহাত্মা সর্ব্বানন্দ ঠাকুর এখানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং সে সময় থেকে এটি সিদ্ধ পীঠস্থান বলে অভিহিত হয়ে আসছে। ওই হিসেবে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উতসবের দিন শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী কালীবাড়ির গুরুত্ব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।
স্থানীয় পুরোহিত, সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ ও এলাকাবাসী  জানান,অবিভক্ত ভারত বর্ষের অধীন থাকাবস্থায় এই মেহের কালীবাড়ি পুজোর আড়ম্বর  ছিল নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ । পরবর্তীতে দেশ বিভাগের পর এটির জৌলুস হারাতে বসে। দেশ স্বাধীনের (১৯৭১) পর থেকে ক্রমান্বয়ে মেলাটি সীমিত আকারে  উদযাপন হয়ে আসছে।
এরপরও প্রতি বছর কার্তিক মাস এলেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শ্যামা পূজা ও দীপাবলি উতসব উপলক্ষে মেহেরকালী বাড়ি মন্দিরে এলাকায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাচারের  মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার মন:তুষ্টি লাভের আশায় রাত জেগে পূজা অর্চনায় মেতে উঠেন।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,দেশ বিদেশ থেকে আসা অসংখ্য পুণ্যার্থী তাদের মনের বাসনা পূরণের জন্যে প্রার্থনারত থেকে বিনিদ্র রজনী পার করেন।
একই সঙ্গে কালীগাছের চতুর্দিকে প্রদক্ষিন করে ভক্তবৃন্দ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করেন,সাথে ঢাকের  বাদ্য বাজিয়ে মন:স্কামনার্থে পাঠা বলি দেয়। এভাবে পূজা লগ্ন থেকে পরবর্তী প্রথম প্রহর পর্যন্ত রাত কাটে ভক্তদের।
এছাড়া খানিক দূরে মেহের কালিবাড়ি মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা। মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন  প্রান্ত থেকে দোকানিরা হরেক রকম মালামাল নিয়ে পশরা সাজিয়ে বসেছেন।
ওই মেলায় প্রথম দিকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের অতিথিদের উপস্থিত থাকলেও পরবর্তীতে এই মেলাটি আঞ্চলিক মেলায় রূপ নেয়। পরবর্তীতে বৃহত্তর কুমিল্লা চাঁদপুর  রামগঞ্জ নোয়াখালীর চাটখিল অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা সাধারণ  ভিড় জমায় এ মেলায়।ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকমের মন্ডা, আঙ্গুলভাজা, খেলনাকদমা,দোকানে মধ্যে কাপড়, চশমা, মিঠাই, আচারের দোকান, গৃহস্থালির জিনিসপত্রের দোকান দেখা যায়। এই মেলা হতেই প্রতি বছর কয়েক  কোটি টাকার উপর কাঠের আসবাবপত্র বিক্রি হয় বলেও ব্যবসায়ীরা জানান। এবারও দোকানিরা সেরকম প্রত্যাশা নিয়ে  এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন।উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন।
এদিকে শ্রী শ্রী মেহেরেশ্বরী কালীবাড়ি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিখিল চন্দ্র মজুমদার জানান,নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়েও  ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর ধারক বাহক হিসাবে  এ মেহের কালীবাড়ি আজো দাঁড়িয়ে আছে তার আপন ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল মহিমায়।
পূরণ করেছে জাতি, ধর্ম, গোত্র, ধনী, গরীব, উঁচু, নিচু, ছোট-বড় সকল মানুষের মনস্কামনা। ধর্মীয় ভাবধারা রেখেছে সমুন্নত। সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন এই কালীবাড়ির মেলা,যা আজও বহমান এ গ্রামীণ জনপদে।