ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরেও ফরিদগঞ্জের ২৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

এস. এম ইকবাল : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। মহান ভাষা দিবসের দিন এলাকার হাজারো শিক্ষার্থী অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নতুন প্রজন্ম ভাষা দিবস সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নিতে পারেনা।
১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন এদেশে তরুণ সমাজ। সেসব ভাষা সৈনিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার। আমাদের ভাষা আন্দোলনকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় দিবসটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে এদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১’শ ৯০টি। এর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ স্কুলে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট শতকরা ৯০ ভাগ স্কুলে কোন শহীদ মিনার নেই। উপজেলার ১০৬টি উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে শহীদ মিনার থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। উপজেলা সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিবসটি পালনের লক্ষে ওইদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরী করে স্থানীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে চেয়ার, টেবিল, কলা গাছ, কাঠ, বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করে।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দিবস সম্পর্কে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

Model Hospital
কয়েকটি বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ভাষা দিবসে আমরা কলার গাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। এলাকার অভিভাবকগণ নতুন প্রজন্মকে বঞ্চিত না করে দ্রুত নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের দাবি জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ আলী রেজা আশরাফি জানান, ইতোপূর্বে জেলা পরিষদের মাধ্যমে অনেক গুলো শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আমার কর্তৃপক্ষের আলোচনা করে সকল স্কুলে শহীদ মিনার করে দিবেন বলে তিনি জানান।

জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান মিটু বলেন, জেলা পরিষদ থেকে সকল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছি। চলতি বছরে বাকি মাধ্যমিক পর্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি হরি বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আলাপ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানতে পারবে। তিনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাস প্রদান করেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে ৭৭৫ কেজি পলিথিন জব্দ, ৫ প্রতিষ্ঠানকে ২৮ হাজার টাকা অর্থদন্ড

ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরেও ফরিদগঞ্জের ২৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

আপডেট সময় : ০৭:৩৬:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
এস. এম ইকবাল : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। মহান ভাষা দিবসের দিন এলাকার হাজারো শিক্ষার্থী অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নতুন প্রজন্ম ভাষা দিবস সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নিতে পারেনা।
১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন এদেশে তরুণ সমাজ। সেসব ভাষা সৈনিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার। আমাদের ভাষা আন্দোলনকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় দিবসটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে এদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১’শ ৯০টি। এর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ স্কুলে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট শতকরা ৯০ ভাগ স্কুলে কোন শহীদ মিনার নেই। উপজেলার ১০৬টি উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে শহীদ মিনার থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। উপজেলা সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিবসটি পালনের লক্ষে ওইদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরী করে স্থানীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে চেয়ার, টেবিল, কলা গাছ, কাঠ, বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করে।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দিবস সম্পর্কে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

Model Hospital
কয়েকটি বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ভাষা দিবসে আমরা কলার গাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। এলাকার অভিভাবকগণ নতুন প্রজন্মকে বঞ্চিত না করে দ্রুত নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের দাবি জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ আলী রেজা আশরাফি জানান, ইতোপূর্বে জেলা পরিষদের মাধ্যমে অনেক গুলো শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আমার কর্তৃপক্ষের আলোচনা করে সকল স্কুলে শহীদ মিনার করে দিবেন বলে তিনি জানান।

জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান মিটু বলেন, জেলা পরিষদ থেকে সকল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছি। চলতি বছরে বাকি মাধ্যমিক পর্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি হরি বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আলাপ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানতে পারবে। তিনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাস প্রদান করেন।