নাম আইরিন বয়স (৯)নয় মাস। ও মেয়ে শিশু। বাবার কোলে চড়ে সুতির গেঞ্জি কিনতে দোকানে এসেছে। মেয়ে শিশু সম্পর্কে এখনও আমাদের সমাজে বিরূপ ধারণা রয়েছে। আমরা আইরিনের অনাগত দিন ভালো হোক এবং সে বড় হয়ে সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখুক এমন প্রত্যাশা করি। আমাদের সমাজে মেয়ে শিশুরা বড় হতে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে হয় তা ছেলে শিশুদের বেলায় পড়তে হয় না। আমাদের মেয়ে শিশুরা নির্বিঘ্নে কোন প্রকার অনাহুত ঘটনার মুখোমুখি না হয়ে বড় হয়ে উঠুক আইরিনের জন্য আমরা এমন একটি পরিবেশ আশা করি। এ দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী এই অর্ধেক জনসংখ্যাকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব নয়। আমরা মেয়েদের বড় হওয়ার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরির পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রত্যাশা করি।
বিগত ৫০ বছর আগেও মেয়ে শিশুদের নিয়ে সমাজে বিরূপ ধারণা ছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু সমাজ বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আমরা এখনো আমাদের মেয়েশিশুদের বিষয়ে সেই পুরনো ধারণাই পোষন করি। কিন্তু ইদানিং রাষ্ট্র এবং সমাজ বিবর্তনে নারীরা যে বিশাল অবদান রেখে চলেছে তা এখনো তেমন একটা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। এথেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের যে কোন সেক্টরে মেয়েরা অনেক অবদান রেখে চলেছে। যা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেলেও সমাজ ব্যবস্থাপনায় এখনো মেয়েরা অবহেলিত। আমাদের দেশের সরকার প্রধান এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রধান মহিলা হওয়া সত্ত্বেও মহিলাদের বা মেয়েদের বিষয়ে এখনও বিরূপ ভাবনা থেকে আমরা বের হতে পারিনি। এই অচলায়তন ভাঙ্গা দরকার।সমকালীন সময়ে শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদেশের মেয়েরা যেভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আগামী দিনে মেয়েদের এই অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখা যাবে না।
স্কুল-কলেজ সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের শিক্ষার হার দিনকে দিন ঊর্ধ্বমুখী। যে হারে মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে সে তুলনায় ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে। নিকট ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের যোগ্যতাসম্পন্ন বিয়ের বর পাওয়াও অনেক কঠিন ও জটিল হবে। এ বিষয়ে সমাজ সচেতন ও সমাজবিজ্ঞানী সহ রাষ্ট্রপরিচালনায় যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে এখনই ভাবতে হবে।
একটি বিষয় লক্ষণীয় আমাদের সমাজে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের মেয়েরাও পশ্চিমা দেশের মেয়েদের মত বিয়ে করে নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবে। ইতিমধ্যেই যার যাত্রা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফিরে আসেন না। দেশে ফিরলেও তারা বিদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে একদিকে বাংলাদেশ যেমন মেধাবীদের হারাচ্ছে, তেমনি এ দেশের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা বিদেশে গিয়ে তার শিকড়কে ভুলতে বসছে। এর উত্তোরণ অতি আবশ্যিক।
লেখক: মোঃ রুহুল আমিন
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী
Mobile: 01712295706,01839600296