ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেচ ম্যানেজারের হেঁয়ালীপনায় এবারও হুমকির মুখে ব্রাহ্মণ সাখুয়ার ১শ একর কৃষি জমি

সেচ ম্যানেজারের একগুঁয়েমি ও হেঁয়ালীপনায় এবারও হুমকির মুখে পড়েছে বাগাদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ সাখুয়ার ১শ একর কৃষি জমি। এতে আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন গত বছর সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান সেচের পানি বন্ধ করে দেয়ায় আমন ও বোরো মৌসুমে তারা ধান উৎপাদন করতে পারেনি। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়াও বিকল্প সেচের মাধ্যমে কৃষকরা পানির ব্যবস্থা করতে চাইলে সেখানেও বাঁধার সৃষ্টি করেন সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান। যে কারণে পশ্চিম ব্রাহ্মণ সাখুয়া বিলের প্রায় ১শ একর কৃষি জমির ফসল আবাদ বন্ধ ছিল গত বছরও। এ বছরও একই পরিস্থিতির শিকার হতে যাচ্ছে স্থানীয় সাধারণ কৃষকরা।
স্থানীয় বোরো ধানচাষী কৃষক আলমগীর শেখ, হাবিব মাঝী ও মান্নান মুন্সি জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে ধান চাষ করে আসছি কিন্তু আমরা সেচের পানি নিয়ে স্কিম ম্যানেজারের গাফিলতিতে সবসময়ই বিপাকে পড়ি। সচের পানি দিয়ে আমাদের চেয়ে তিনি সবসময় লাভবান হন বেশি। অথচ এরপরও পানি ব্যবস্থাপনায় সেচ ম্যানেজারের হেঁয়ালীপনায় ও জোরজবস্তি আমাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গত বছর উনি ইচ্ছাকৃতভাবে পানির সেচ বন্ধ রেখে আমাদের ফসল উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে। তারা জানায়, আমাদের এখানে একটি গ্রামীণ সড়কের কাজ করতে গিয়ে সেচের ড্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অজুহাতে সেচ মেনেজার আমাদেরকে পানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। অথচ সড়কের কাজ করার সময় সড়ক নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ও কৃষকদের আবেদন থাকা সত্ত্বেও তিনি পানি সেচের ড্রেন মেরামত করেননি। এছাড়াও পানির পাইপ ও বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বললেও তিনি রাজি হননি।
কৃষক মান্নান মুন্সি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন মেরামতের কথা বলে স্কিম ম্যানেজার ফজলুর রহমান গত বছর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার বরাদ্দ আনে। অথচ এ পর্যন্ত ড্রেন মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ বছর বোরো ধানের আবাদ সামনে রেখে স্কিম ম্যানেজার কৃষি জমি বাদ দিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের ভিটে জমির উপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে যান। এতে স্থানীয় মানুষ ফুসে উঠে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগকারী স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ খান ও শামীমা আক্তার বলেন, সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান কৃষিজমি বাদ দিয়ে আমাদের ভিটে জমির উপর দিয়ে ট্রেন নির্মাণ করতে চেষ্টা করে এতে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। এতে সেচ ম্যানেজার ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রতিনিধি দলের সাথে অশোভন আচরণ করে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে সেচ ম্যানেজার পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ খান ও শামীমা আক্তার জানান, কৃষি জমি রেখে বসতি জমির উপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। মূলত সেচ ম্যানেজার নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বাদ দিয়ে এই ড্রেন নির্মাণ করতে চাচ্ছে। তারা জানান, এখানে আমাদেরও কৃষি জমি রয়েছে। ধান আবাদের জন্য আমরা বিকল্প সেচ ব্যবস্থা করতে চাইলেও তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে বাধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সেচ ম্যানেজার মূলত কৃষকদের জিম্মি করে নিজের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছি। অভিযোগের সততা পাওয়া গেছে। ওখানকার জমি মালিক হচ্ছে ওখানকার মানুষ তারা যদি স্বেচ্ছায় জমি না দেয় তাহলে সরকারি কোন প্রকল্প হবে না। কৃষকের জন্য যেহেতু সেচের প্রয়োজনীয়তা আছে সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা হবে, যাতে করে কাহারো কোন ক্ষতি না হয় এবং সেচের ব্যবস্থাও করা হয়। বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন একটি প্রস্তাবনা ছিল তবে ড্রেন করার মত জায়গা না পাওয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে।
সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এগুলো মিথ্যা। তবে সেচের ড্রেন তো অন্যের জমি দিয়েই দিয়েছে। এখন রাস্তা হয়েছে বিধায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ কেউ সেচটা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। আমি এখন আর সেচের কোন কাজ করতে চাই না। কৃষকরায় সিদ্ধান্ত নিবে কাকে দিয়ে সেচের পানি ব্যবস্থা করবে।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে কার্টন ফ্যাক্টরিতে আগুন,নিয়ন্ত্রণে ৮ইউনিট

সেচ ম্যানেজারের হেঁয়ালীপনায় এবারও হুমকির মুখে ব্রাহ্মণ সাখুয়ার ১শ একর কৃষি জমি

আপডেট সময় : ১১:০৯:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
সেচ ম্যানেজারের একগুঁয়েমি ও হেঁয়ালীপনায় এবারও হুমকির মুখে পড়েছে বাগাদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ সাখুয়ার ১শ একর কৃষি জমি। এতে আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন গত বছর সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান সেচের পানি বন্ধ করে দেয়ায় আমন ও বোরো মৌসুমে তারা ধান উৎপাদন করতে পারেনি। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়াও বিকল্প সেচের মাধ্যমে কৃষকরা পানির ব্যবস্থা করতে চাইলে সেখানেও বাঁধার সৃষ্টি করেন সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান। যে কারণে পশ্চিম ব্রাহ্মণ সাখুয়া বিলের প্রায় ১শ একর কৃষি জমির ফসল আবাদ বন্ধ ছিল গত বছরও। এ বছরও একই পরিস্থিতির শিকার হতে যাচ্ছে স্থানীয় সাধারণ কৃষকরা।
স্থানীয় বোরো ধানচাষী কৃষক আলমগীর শেখ, হাবিব মাঝী ও মান্নান মুন্সি জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে ধান চাষ করে আসছি কিন্তু আমরা সেচের পানি নিয়ে স্কিম ম্যানেজারের গাফিলতিতে সবসময়ই বিপাকে পড়ি। সচের পানি দিয়ে আমাদের চেয়ে তিনি সবসময় লাভবান হন বেশি। অথচ এরপরও পানি ব্যবস্থাপনায় সেচ ম্যানেজারের হেঁয়ালীপনায় ও জোরজবস্তি আমাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গত বছর উনি ইচ্ছাকৃতভাবে পানির সেচ বন্ধ রেখে আমাদের ফসল উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে। তারা জানায়, আমাদের এখানে একটি গ্রামীণ সড়কের কাজ করতে গিয়ে সেচের ড্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অজুহাতে সেচ মেনেজার আমাদেরকে পানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। অথচ সড়কের কাজ করার সময় সড়ক নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ও কৃষকদের আবেদন থাকা সত্ত্বেও তিনি পানি সেচের ড্রেন মেরামত করেননি। এছাড়াও পানির পাইপ ও বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বললেও তিনি রাজি হননি।
কৃষক মান্নান মুন্সি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন মেরামতের কথা বলে স্কিম ম্যানেজার ফজলুর রহমান গত বছর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার বরাদ্দ আনে। অথচ এ পর্যন্ত ড্রেন মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ বছর বোরো ধানের আবাদ সামনে রেখে স্কিম ম্যানেজার কৃষি জমি বাদ দিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের ভিটে জমির উপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে যান। এতে স্থানীয় মানুষ ফুসে উঠে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগকারী স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ খান ও শামীমা আক্তার বলেন, সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান কৃষিজমি বাদ দিয়ে আমাদের ভিটে জমির উপর দিয়ে ট্রেন নির্মাণ করতে চেষ্টা করে এতে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। এতে সেচ ম্যানেজার ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রতিনিধি দলের সাথে অশোভন আচরণ করে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে সেচ ম্যানেজার পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ খান ও শামীমা আক্তার জানান, কৃষি জমি রেখে বসতি জমির উপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। মূলত সেচ ম্যানেজার নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বাদ দিয়ে এই ড্রেন নির্মাণ করতে চাচ্ছে। তারা জানান, এখানে আমাদেরও কৃষি জমি রয়েছে। ধান আবাদের জন্য আমরা বিকল্প সেচ ব্যবস্থা করতে চাইলেও তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে বাধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সেচ ম্যানেজার মূলত কৃষকদের জিম্মি করে নিজের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছি। অভিযোগের সততা পাওয়া গেছে। ওখানকার জমি মালিক হচ্ছে ওখানকার মানুষ তারা যদি স্বেচ্ছায় জমি না দেয় তাহলে সরকারি কোন প্রকল্প হবে না। কৃষকের জন্য যেহেতু সেচের প্রয়োজনীয়তা আছে সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা হবে, যাতে করে কাহারো কোন ক্ষতি না হয় এবং সেচের ব্যবস্থাও করা হয়। বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন একটি প্রস্তাবনা ছিল তবে ড্রেন করার মত জায়গা না পাওয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে।
সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এগুলো মিথ্যা। তবে সেচের ড্রেন তো অন্যের জমি দিয়েই দিয়েছে। এখন রাস্তা হয়েছে বিধায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ কেউ সেচটা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। আমি এখন আর সেচের কোন কাজ করতে চাই না। কৃষকরায় সিদ্ধান্ত নিবে কাকে দিয়ে সেচের পানি ব্যবস্থা করবে।